গুনাহের পরিণতি
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
ظهر الفساد فى البر والبحر بما كسبت ايدى الناس ليذيقهم بعض الذى عملوا لعلهم يرجعون
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
ظهر الفساد فى البر والبحر بما كسبت ايدى الناس ليذيقهم بعض الذى عملوا لعلهم يرجعون
অর্থঃ
সমুদ্রে ও স্থলে মানুষের কৃতকর্মের জন্য বিপদাপদ ছড়িয়ে পড়ে, ফলে তাদেরকে তাদের
কিছু কিছু কর্মের ফল আল্লাহ তায়ালা ভোগ করান, যাতে তারা ফিরে আসে। (সূরা রূম-৪১)
এক স্বর্ণকারের স্ত্রীর ঘটনা
একজন স্বর্ণকার ছিলেন। তার স্ত্রী ছিল অত্যন্ত সুন্দরী এবং নেককার।
স্বর্ণকার একদিন ঘরে এসে দেখলেন স্ত্রী অঝোরে কাঁদছেন। তিনি জিঞ্জেস করলেন, তোমারা
কি হয়েছে? কাঁদছ কেন? স্ত্রী বললেন, আমাদের যে কাজের ছেলেকে দশ বছর ধরে আমরা
লালন-পালন করছি, আজ সে বাজার থেকে তরি-তরকারি এনে ঘরে দিয়ে যাবার সময় হঠাৎ আমার হাত চেপে ধরে এবং কু-দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকায়। দশ
বছর লালন পালনের এই প্রতিদান আমি পেলাম। এমন বিশ্বাসঘাতকতা সে আমাদের সাথে করল।
এজন্যই আমি কাঁদছি। এ কথা শুনে স্বামীর চোখ দিয়েও অশ্রু ঝরতে লাগল, তিনিও
কাঁদতে আরম্ভ করলেন। স্ত্রী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কেন কাঁদছেন? স্বামী
বললেন, আসলে আমাদের কাজের ছেলে কোন অন্যায় করেনি। অন্যায় আমারা দ্বারা হয়েছে। আজকে
আমার দোকানে একজন মহিলা অলংকার কিনতে এসেছিল। সে দু’টি চুড়ি পছন্দ করে এবং চুড়ি
দু’টি তার হাতে পড়িয়ে দেয়ার জন্য আমাকে বলে। তাকে চুড়ি পড়ানোর সময় তার হাত দ’টি
আমার কাছে আকর্ষণীয় লেগেছিল। ফলে লালসা নিয়ে আমি তার হাতে চাপ দিয়েছিলাম। এর
পরিণামেই আমার পরিবারের সাথে আজ এ আচরণ হয়েছে।
সুতরাং আল্লাহ রব্বুল আলামিনের
অবাধ্যতা তো অবাধ্যতাই, তাওবা ব্যতীত এর আর কোন
সমাধান নাই।
গুনাহের মধ্যে অস্থিরতা রয়েছেঃ
গুনাহ্গার যতক্ষণ পর্যন্ত তওবা না
করবে, ততক্ষথ পর্যন্ত তার মনের অশান্তি দূর
হবে না। এ পেরেশানী কখনো স্ত্রীর পক্ষ থেকে, কখনো সন্তান
সন্ততির পক্ষ থেকে, কখনো ব্যবসায়িক ব্যাপারে, কখনো সুস্থতা সম্পর্কে হবে।
মোট কথা কোন না কোন পেরেশানীর বাতি
প্রজ্জ্বলিত থাকবেই। টেনশনে সময় কাটবে। বুঝা গেল গুনাহ মানুষকে বে-চাইন করে রাখে।
বিচার সালিষ নয় তো শুধু * হাশর দিনের
বালা
সইতে হবে এ ধরাতেও * পাপের অমোঘ
জ্বালা
গুনাহের চার সাক্ষীঃ
কিয়ামতের দিন প্রত্যেক মানুষের সাথে
চার প্রকার স্বাক্ষী উপস্থিত করা হবে।
প্রথম সাক্ষী,
মানুষের আমলনামাঃ
যখন আমলনামা সম্মুখে রাখা হবে,
তখন আপনি অপরাধিদের দেখবেন যে, তারা ভয়ে
কাঁপছে এবং বলছে-
‘হয়! আমাদের দূর্ভোগ। এটি
কেমন কিতাব ছোট বড় কোন গুনাহই লিপিবদ্ধ না করে ছাড়েনি’
‘তারা স্বীয় কৃতকর্মকে
সম্মুখে উপস্থিত পাবে, আপনার প্রতিপালক কারো উপর জুলুম
করবেন না’ (কাহাফ-৪৯)
দ্বিতীয় সাক্ষী-ফিরিশতাঃ
‘তোমাদের উপর নিয়োজিত
রয়েছে তোমাদের হিফাযতকার এবং সকল আমল লিপিবদ্ধকার সম্মানিত ফিরিশতা, যারা তোমাদের সকল আমল সম্পর্কে অবগত’ (ইনফিতার-১০-১২)
তৃতীয় সাক্ষী-মানুষের অঙ্গ-প্রতঙ্গঃ
‘আজ আমি তাদের মুখে মোহর
লাগিয়ে দিব, তাদের হাতের সাথে কথা বলব, তাদের পা-গুলো সাক্ষী দিবে যা তারা করত’ (ইয়াছিন-৬৫)
অর্থাৎ মুখে সিল লাগিয়ে
দেয়া হবে। দুনিয়াতে এই মুখ বাস্তব ঘটনার বিপরীত বিবৃতি দিত,
কিয়ামতের দিন মুখের কর্মকান্ড রহিত করে দেয়া হবে।
কিয়ামতের দিন এমন দিন হবে যে দিন সকল
গোপন রহস্য প্রকাশ করে দেয়া হবে। (তরিক-৯)
(আল্লাহু আকবার!) এ আয়াতটি তিলাওয়াত
করে উম্মতের ওলী-বুজুর্গরা অনেক কান্নাকাটি করতেন। যখন মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহ
তার বিরুদ্ধে কেন সাক্ষী দিচ্ছ? তারা বলবে,
আল্লাহ্ তা’আলা আমাদেরকে বাকশক্তি
দিয়েছেন যিনি প্রত্যেক অঙ্গকে বাকশক্তি দিয়েছেন। (হামীম সাজদাহ্)
একটু ভেবে দেখুন! গুনাহ করার সময়
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে লুকানো কি সম্ভব? সম্ভব
নয়। কারণ এসব অঙ্গ দ্বারাই তো আমরা গুনাহ করে থাকি। এ অঙ্গগুলোই কিয়ামতের দিন
রাজসাক্ষী হবে।
চতুর্থ সাক্ষী-আল্লাহর জমিনঃ
কিয়ামতের দিন চতুর্থ সাক্ষী হবে আল্লাহর জমিন।
ক্যামেরা যেমন ছবি সংলক্ষণ করে, বিভিন্ন দৃশ্য ধারন করে রাখে। তদ্রুপ আল্লাহর
জমিনও সব দৃশ্যগুলোর ছবি ধারণ করে নেয়। নেককারদের ছবিও, গুনাহগারদের ছবিও।
কিয়ামতের দিন আল্লাহ রাব্বুর আলামীন জমিনকে আদেশ করবেন তুমিও বল, তোমার পৃষ্ঠে যা
কিছু ঘটেছে।
'সেদিন জমিনও সংবাদ পরিবেশন করবে এবং বরে দিবে
আমরা কি কি করেছি। (ঝিলঝাল-৪)
অতএব গুনাহের চিকিৎসা একটি-আর তা হল মানুষ
তওবা করে ভবিষ্যতে পাপমুক্ত নেক জিন্দেগী যাপন করবে।
(আত্মার পরিচর্যা)
নাই কোন আশ্রয় ও মুক্তিদাতা একমাত্র আল্লাহ্
ছাড়া।
সর্বময় শক্তি ও ক্ষমতার মালিক একমাত্র আল্লাহ্
তায়ালাই।